ভারতের আসাম রাজ্য সরকার ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস নামে বিতর্কিত তালিকা প্রকাশ করে বলছে, এই নাগরিক তালিকার লক্ষ্য হলো আসাম থেকে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী `বাংলাদেশিদের’কে চিহ্নিত করা। কিন্তু এই তালিকাকে কেন্দ্র করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে এই নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং বহিষ্কারও করা যেতে পারে। এই নিয়ে রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কায় হাজার হাজার নিরাপত্তাবাহিনীর লোক মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকালে বলেছিলেন, তাঁর দল বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে তাদের ফেরত পাঠাবেন। ক্ষমতায় আসার পর আসাম থেকে কাজটি শুরু করতে যাচ্ছেন নতুন এই প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭১ সালের পর যেসব বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ওই রাজ্যে এসে বসবাস করছেন, প্রথমে সেই তালিকা তৈরি করবে আসাম সরকার। এই লক্ষ্যে আসাম সরকার তৈরি করবে একটি জাতীয় নাগরিক রেজিস্টার। এই জাতীয় নাগরিকদের তালিকা করতে মোদি সরকার ২৬০ কোটি রুপি বরাদ্দও করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, যেসব মানুষ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ফারাক রয়েছে। আসাম সরকার মনে করছে, আসামের জন্য এটা কঠিন কাজ হবে। এই তালিকা তৈরি করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লেগে যাবে। কারণ রাজ্যের সব বাসিন্দাকেই একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। তারপর ওই ফরম দেখে বাছাই করা হবে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক ও বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের।
আসাম রাজ্য সরকারের প্রকাশিত এই তালিকায় কী আছে ?
এই প্রশ্নের জবাবে আসামের সাংবাদিক অমল গুপ্ত বলেন, রাজ্যের নোবেল অফিসার প্রতিখা জেলা সরকারি কার্যালয়ে এই তালিকা ঘোষণা করেন। এই তালিকা সম্পর্কে তিনি জানান, রাজ্যে ৩ কোটি ২৯ লাখ লোক আবেদন করেছিলেন তার মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। আর বাকি ১ কোটি ৩৯ লাখের ব্যাপারে পরীক্ষা চলছে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ এই তালিকার বাইরে রয়েছে এবং তাদের যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে, যারা বাইরে রয়েছে তারা কেন বাইরে রয়েছে তার কী কোনো কারণ তারা জানিয়েছে?
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদেরকে ১৪টি নথিপত্র সাবমিট করতে বলা হয়েছিল কিন্তু তাদের অধিকাংশই এই ১৪টি নথিপত্র সাবমিট করতে পারিনি। আর তাদের এই ভুলত্রুটির কারণেই তাদেরকে ফাইনাল করা হয়নি।
অনেক আশঙ্কা বা উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল যে রাজ্যের অধিকাংশ বাংলাভাষী মুসলিম এই তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে, এটি কী প্রশমিত হয়েছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশমিত খুব একটা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং ৮৫ কোম্পানি ও আধা সামরিক বাহিনীকে বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এখনো তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এই তালিকা নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং কোনো কোনো পক্ষ এই তালিকা দ্রুত প্রকাশ করার কথা বলেছে আবার কোনো পক্ষ এটা নিয়ে অনেক বিক্ষুব্ধ বা উদ্বিগ্ন ছিলেন তাহলে আজকে কী তাদের কোনো কর্মসূচি আছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজ্যের ১০টি মুসলিম অধ্যুষিত জেলা। এইসব জেলাতে একটা আতঙ্ক বা ভয়-ভীতি তৈরি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেক ভুল নথিপত্র ধরা পড়েছে। এছাড়াও কয়েক হাজার গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু এই মূহুর্তে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা নেই।
অনেক বিতর্কের পর এই তালিকা প্রকাশ হলো তো এই তালিকা নিয়ে পুরো আসামের মানুষের মধ্যে কী ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৫১ সালের পর ভারত বর্ষের কোনো রাজ্যে এই ধরণের জাতীয় নাগরিক পুঞ্জি প্রকাশ হয়নি এই প্রথম আসামে প্রকাশ হয়েছে। তাই এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে এবং একটি পক্ষ এখনো এটা মেনে নিতে পারিনি। সেই ক্ষেত্রে একটা আশঙ্কাতো আছেই কারণ এখনো ১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই ক্ষেত্রে অনেক বড় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে আর এই শূন্যতা থেকে বিক্ষোভ হবে।